রংপুর: বাইর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। ভিতরে ঢুকেই হয়তো কেউ কেউ অবাক হতে পারে। দৃষ্টি জুড়ে দেশ বিদেশি হাজারো গাছ-গাছালির সমারোহ। সারাক্ষণ নানান প্রজাতির পাখ-পাখির কোলাহলে মুখরিত। সবুজ প্রকৃতির ছায়া ঘেরা পরিবেশে সারাটা দিন হেসে খেলে ঘুরছে ফিরছে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা।
ছোট-বড়, তরুণ-তরুণী, অবাল-বৃদ্ধা সব বয়সি মানুষের পদাচারণা যেন এখানে। সন্ধ্যা হবার আগে যখন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা নিজ গন্তব্যে ফেরার জন্য প্রধান ফটকে ছুটছে, তখন নীলিমা ভ্রমণ শেষে বাতাসে ডানা মেলে নীড়ে ফিরে আসতে শুরু করে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল। এরকম নৈস্বর্গিক পরিবেশে নানান রঙ, ঢঙ আর সঙয়ের ছোয়ায় বর্ণিল সাজে সজ্জিত রংপুরের বেসরকারি বিনোদন স্পট ‘ভিন্নজগত’।
প্রায় ১শ একর জমির উপর গড়ে উঠা উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ তিলোত্তমা বিনোদন কেন্দ্রটি একবার ঘুরে না আসলে হয়তো আফসোস লাগতেই পারে। কারণ এই ভিন্নজগতের ভিতর যেন রয়েছে আরেকটি জগত। ভিন্নজগতের প্রধান ফটক পার হলেই তিন দিকের বিশাল লেক ঘেরা নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা শেষ হলেই সামনে পড়বে লোহার ১টি ব্রিজ। আর এ ব্রিজটি পার হলেই দেখা মিলবে ভিন্নজগতের ভেতরের আরেকটি ভিন্নজগতের।
এখানে রয়েছে আধুনিক বিশ্বের বিস্ময় এবং বাংলাদেশের প্রথম প্লানেটোরিয়াম। রয়েছে রোবট স্ক্রিল জোন, স্পেস জার্নি, জল তরঙ্গ, সি প্যারাডাইস, আজব গুহা, নৌকা ভ্রমণ, শাপলা চত্বর, ৫২ ভাষা আন্দোলন ও একাত্তারের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ভাস্কর্য, ওয়াকওয়ে, থ্রিডি মুভি, ফ্লাই হেলিকপ্টার, মেরি গো রাউন্ড, লেক ড্রাইভ, সুইমিং পুল, স্পিনিং হেড ছাড়াও দর্শনীয় বিভিন্ন রাইডার। এছাড়াও সৌখিন মৎস শিকারীদের জন্য রয়েছে মাছ ধরার ব্যবস্থা।
শুধু তাই নয়, বিশাল আয়তনের এই ব্যতিক্রম ভিন্নজগতে একই সঙ্গে অন্তত ৫শ পৃথক দলের পিকনিক করার ব্যবস্থা রয়েছে। এর ভিতরেই রয়েছে অন্তত প্রায় ১ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা। কটেজ রয়েছে ৭টি। রয়েছে থ্রিস্টার মডেলের ড্রিম প্যালেস। আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত শপিং মল।
এখানকার জলাশয়ে রয়েছে নৌকা ভ্রমণের সুবিধা। শিশুদের জন্য রয়েছে ক্যাঙ্গারু, হাতি, ঘোড়া, ডায়নেসরসহ নানা জীবজন্তুর মূর্তি। এগুলো দূর থেকে দেখতে জীবন্ত মনে হলেও বাস্তবে এসব ইট, পাথর ও লোহায় গড়ায়।
ভিন্নজগতের জলাশয়ের চারপাশ জুড়ে পরিকল্পিতভাবে রোপিত রয়েছে নানা জাতের শোভাবর্ধনকারী গাছ-গাছালি।
রংপুর অঞ্চলের লোকজন ছাড়াও দেশের নানান প্রান্ত থেকে প্রতিদিন বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসেন এখানে।
ময়মনসিংহ থেকে ভিন্নজগতে বেড়াতে আসা এনজিওতে চাকরিত দম্পতি কামাল হোসাইন ও মিসেস পারভীন জানান, ঢাকার বাইরের অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রের চেয়ে এই বিনোদন কেন্দ্রে নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব কিছুই অনেক সুন্দর। ভিন্নজগতে থাকা-খাওয়ারসহ সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। একই কথা জানান ভিন্নজগতে বেড়াতে আসা বগুড়া, নাটোর, জয়পুরহাট ও পঞ্চগড় জেলার দর্শনার্থীদের কয়েকজন।
ভিন্নজগতে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে পরিচালক মোস্তফা কামাল বাংলামেইলকে জানান, এখানে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বেশকিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়াও সার্বক্ষণিক বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখাশুনা করা হয়।
এছাড়াও দর্শনার্থীদের থাকার জন্য ১টি প্যালেস রয়েছে, যার কক্ষগুলো অত্যাধুনিক। রাত্রি যাপন ও খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘থাকা ও খাওয়া মূলত মৌসুমের চাহিদা অনুযায়ী নেয়া হয়।’
প্রবেশ মূল্য: ভিন্নজগতের প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। এছাড়া ভেতরের প্রতিটি রাইডের জন্য আলাদা করে ৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।
থাকা-খাওয়া: রংপুরে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল রয়েছে। এখানে থ্রিস্টারসহ বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক হোটেল রয়েছে। ভাড়া ৩শ থেকে ৫ হাজার টাকার পর্যন্ত।
যেভাবে আসা যায়: ঢাকার মহাখালী, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর এবং গাবতলী থেকে রংপুরগামী বেশ কয়েকটি বিলাস বহুল এসি ও নন এসি বাস রয়েছে। এসব বাসের ভাড়া ৫শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে।
এছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রংপুর এক্সপ্রেস সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টায় রংপুরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। রংপুরে ট্রেন ভাড়া ২শ থেকে ৭শ টাকা।
ঢাকা থেকে রংপুর আসতে সময় লাগবে সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। ট্রেনে লাগবে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা। রংপুর থেকে সরাসরি ভিন্নজগতে যাওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাইভেটকারের ভাড়া ৪শ থেকে ৫শ টাকা এবং মাইক্রোবাসের ভাড়া ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা।
এছাড়া সৈয়দপুর ও দিনাজপুরের গাড়িতে চড়েও ভিন্নজগতে যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে নামতে হবে রংপুরের পাগলাপীর বাসস্ট্যান্ডে। এছাড়া রংপুর থেকে জলঢাকাগামী গাড়িতে ভিন্নজগতে যেতে পারবেন। সেখান থেকে ১শ থেকে দেড়শ টাকায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকসায় করে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে যাওয়া যায় ভিন্নজগতে।